![]() |
Photo Credit: prettylittercats.com |
ভারতীয় উপমহাদেশে কালো বিড়ালকে অশুভ মনে করা হয়। যাত্রাপথে কালো বিড়াল দেখাকে অশুভ মনে করা হয়। কোনো আলোচনার মাঝে কালো বিড়াল যেতে দেখাকে অশুভ মনে করা হয়। কেউ বিড়াল মেরে ফেললে তাকে বিড়ালের ওজনের সমপরিমাণ লবণ নদীতে ফেলতে হবে বলে একটা কুসংস্কার আজো প্রচলিত আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। আরও একটা কুসংস্কার আছে যে, বিড়াল মারার সময় কথা বলতে হয়না; কথা বললে বিড়াল মরবে না। ব্রিটেনে বিয়ের অনুষ্ঠানে কালো বিড়াল দেখলে ঐ বিয়ে শুভ এমনটি মনে করা হয়। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের নাবিকেদের স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের সমুদ্র থেকে নিরাপদে ফিরে আসার কামনায় কালো বিড়াল পালে। রাশিয়াতে বাচ্চাদের দোলনায় বিড়াল রাখা হয় শয়তানের কুনজর হতে বাচ্চাকে বাঁচাতে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, বিড়াল পৃথিবীতে নয়(০৯) বার জন্ম নেয়।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিড়ালকে ঐশ্বরিক সম্মান প্রদর্শন করতো এবং কোনও অবস্থাতেই তারা একটা বিড়ালকে মারতও না বা হত্যা করতো না, যদি কেউ বিড়াল হত্যা করতো তবে তারও শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। ঘরের মানুষ সবাই একটা বিড়ালের মৃত্যুকে নিয়ে শোক প্রকাশ করতো এবং মৃতদেহটিকে মাটি দেয়া হতো যথেষ্ট উৎসব পালন করার মধ্য দিয়ে। প্রাচীন মিশরীয় কুসংস্কার ছিল যে, তারা বিশ্বাস করতো একটা বিড়ালের নয়টি জীবন থাকে।
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে সর্বত্র ইউরোপ ব্যাপী বিড়াল জাদুকরদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি আজ পর্যন্ত কোনও ঐতিহ্যবাহী ডাইনীর বর্ণনা তার কালো বিড়ালটি ছাড়া হয় না। বলা হয়ে থাকে যাদুকরীরা প্রায়ই নিজেদেরকে কালো বিড়ালের আকারে পরিবর্তন করে ফেলে। এই ধরনের বিড়ালেরা তাদের গৃহিণীদের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে বলে দোষারোপ করা হয়। এক সময় অনেক লোকেই বিশ্বাস করতো যে, মে মাসে বিড়াল ছানা জন্মালে তা হবে বিশেষভাবেই মৃত্যুর সাথে জড়িত এবং যাদুকরী ডাইনীদের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং জন্মের সাথে সাথে তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলতে হবে। একটি বিড়ালের উপস্থিতিতে তারা পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেও অনীহা প্রকাশ করতো, জেনো সেটা পরিচিত একটি ডাইনী অথবা এমনকি গোপনে উপস্থিত একজন ডাইনী। পূর্ব ইউরোপে বিড়ালের গায়ে প্রায়ই আড়াআড়ি দাগ দিয়ে রাখা হতো যাতে তারা ডাইনীতে রূপান্তরিত হতে না পারে। আর তখন ফ্রান্সে ডাইনীতে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা আছে এরূপ বিড়ালকে প্রায়ই খাঁচায় বন্দী করে পুড়িয়ে মারা হতো।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ঐ বিড়ালটি যেটি ছিল সম্পূর্ণ কালো। যদি একটি কালো বিড়াল কোনও লোকের যাত্রা পথের সামনে দিয়ে আড়াআড়িভাবে হেঁটে যেত তবে বিশ্বাস করা হতো এই ঘটনা তার জন্য সৌভাগ্য এনে দেবে এবং সে যে আশা করবে তা পূর্ণ হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও বেলজিয়ামে এর বিপরীতটা ভাবা হতো, তাদের মতে সাদা এবং ধূসর রঙের বিড়ালই বেশি পছন্দনীয়, তাদের মতে কালো বিড়ালই শুধু মাত্র দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। এই বিশ্বাসের বিকল্প মতাবলম্বীরা যাই হোক এই মত প্রকাশ করে যে, যদি একটি কালো বিড়াল পেছন ফিরে যায় অথবা পেছন দিক থেকে তাকে দেখা হয় তাহলে তা প্রকৃতপক্ষেই একটা অমঙ্গলের চিহ্ন হতে পারে। তৎসত্ত্বেও একটা কালো বিড়ালের প্রতীক সৌভাগ্যের অগ্রদূত হিসেবে অন্তত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে সর্বব্যাপী স্বীকৃত। সেখানে একটা কালো বিড়ালকে ছুঁয়ে দেয়াও সৌভাগ্যের। সমস্ত ইউরোপ ব্যাপী সাদা বিড়ালকে ব্যাপকভাবে অবিশ্বাস করা হয়। আর সেই সময়ে দলছাড়া কচ্ছপের খোলার মতো বিড়ালকে ঘরে অত্যন্ত বেশি করে অপ্রত্যাশিত মনে করা হয়, কারণ লোকে ভয় করে এটা সাথে করে মন্দ ভাগ্য নিয়ে আসে। তাদের আরও বিশ্বাস এই যে, কখনোই বিড়ালকে টাকা দিয়ে ঘরে কিনে আনতে নেই, যদিও বা কেউ দুর্ঘটনাক্রমে একটা কিনে ঘরে আনে তবে সেটা কখনোই ভালো ইঁদুর ধরা হবে না।
পূর্বে বিশ্বাস করা হতো যদি বিড়াল হাঁচি দেয় তার অর্থ অবশ্যই বৃষ্টি আসবে, কিন্তু যদি বিড়ালটি একসাথে তিনবার হাঁচি না দেয় তার অর্থ সমস্ত পরিবারের লোকেরা ঠাণ্ডায় ভুগবে। যদি কোনও বিড়াল আগুনের দিকে পেছন দিয়ে বসে তার অর্থ সে জানে একটা ঝড় অথবা একটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া আগত প্রায়। আর যদি একটি বিড়াল একটি টেবিলের পা আঁচড়ায় তা অতি সত্ত্বর আবহাওয়ায় একটা পরিবর্তন এর বিপদ সংকেত দেয়। বিড়াল যখন নিজেদের ধৌত করে অথবা পরিত্যক্ত জিনিস নিয়ে আমোদ প্রমোদ খেলা করে তখন বুঝতে হবে যে জলীয় আবহাওয়া আসন্ন। কিন্তু তারা যদি এই কাজের জন্য দরজাটা বেছে নেয়, তাহলে সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কোনও স্থানে একজন ধর্মযাজকের গৃহে উপস্থিতির নিশ্চিত ইঙ্গিত বলেই ধরে নেয়া হয়। যদি একটি বিড়াল তার মুখের বাম পাশের কানের ওপর পর্যন্ত ধুতে থাকে তার অর্থ হবে একজন মহিলার গর্ভে সন্তান আসার পথে রয়েছে, যদি সে ডান কানের ওপর ধোয় তাহলে বুঝতে হবে মহিলার গর্ভে পুরুষ সন্তান আসবে।
সদ্য বিবাহিত দম্পতির কাছে কনের পাশ ঘেঁষে যদি একটি বিড়াল উপস্থিত হয়, তা হবে মঙ্গলের, কিন্তু বিড়ালটি যদি কোনও মৃতদেহের ওপর দিয়ে লাফিয়ে পার হয় তাহলে তাকে অবশ্যই ধরে মেরে ফেলতে হবে। কারণ মনে করা হয় এতে মৃতের আত্মা নরকে যাবে। আগে বিশ্বাস করা হতো বিড়ালকে লাথি মারলে তার গেঁটে বাত হবার সম্ভাবনা আছে। লোকদেরকে আরও হুঁশিয়ার করে দেয়া হতো, তারা জেনো একটা বিড়ালকে তাদের শিশুদের বিছানায় শুতে না দেয়, কারণ বিড়াল তাদের শ্বাসকে চুষে নিয়ে তাকে মেরে ফেলতে পারে।
গণ ওষধিতে উপদেশ দেয়া হয় যে, মে মাসে চোখের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে একটা বিড়ালের লেজ টেনে নিলে ফুলে ওঠা টিউমার এবং আঁচিল সেরে যায়, নাকের ছিদ্রের মধ্যে একটা বিড়ালের লেজ চেপে প্রবেশ করিয়ে দিলে নাক থেকে রক্ত পড়া ভাল হয়ে যায় এবং দাঁতের ব্যথা ভালো করার জন্য শুকনো বিড়ালের চামড়া মুখের ওপর চেপে ধরতে হয়। আগেকার দিনে কঠিন আঘাত ও ক্ষত চিকিৎসার জন্য বলা হতো যে আস্ত একটা বিড়াল জলপাই এর তেলে সিদ্ধ করে তার থেকে মলম বানিয়ে লাগাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে কালো বিড়ালকে অল্প জ্বালে সেদ্ধ করে ঝোল তৈরি করে ক্ষয় রোগ ভালো করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। পরিবারের অন্যান্য রোগব্যাধি ভালো করার জন্য বলা হতো রোগীকে গোসল দিয়ে সেই গোসলের পানি ধরে রেখে সেগুলো একটা বিড়ালের উপর দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে পানি যেভাবে চলে যাবে তার সাথে ঘরের সব রোগ, বালা-মুছিবৎও দূর হয়ে যাবে। বাংলাদেশে অনেকে বিশ্বাস করে যে, বাসর রাত্রিতে বিড়াল মারতে হয় তাহলে বর তার স্ত্রীর অনুগত থাকে।
পূর্বে খনি শ্রমিকেরা বিড়াল শব্দটি উচ্চারণ করত না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা খনির মধ্যে থাকতো এবং যদি একটা বিড়ালকে নিচে খনির মধ্যে দেখা যায় এবং থাকতে দেয়া হয় তাহলে তারা কাজ করতে অস্বীকার করতো। নাবিক ও জেলেরা যদিও তারা একটা সৌভাগ্য প্রদানকারী কালো বিড়ালকে তাদের নৌযানে করে নিয়ে যেতে পছন্দ করতো, কিন্তু বিড়ালটির ডেকের ওপরের মিউমিউ ডাকটি অপছন্দ করতো, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এটা আসলে একটা দু:সময়ের আভাস বহন করে। আর যদি একটি বিড়াল উত্তেজিত ভাবে খেলা করে তাহলে সেটা দ্বারা বুঝতে হবে যে একটা মধ্যম ধরনের ঝড় আসন্ন। যদি জাহাজের বিড়ালটি জাহাজের বাইরে ফেলে দেয়া হয় অথবা তার সাথে অন্য কোনও প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তাহলে যারা এরূপ করবে তাদের উপর অতিশীঘ্রই একটা ভয়াবহ ঝড় এসে তাদের সাজা দেবে। একটা বিড়ালকে কাপবোর্ডের মধ্যে আটক করে রাখা অথবা একটা পাত্রের নিচে ঢেকে রাখা হলে এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তাহলে একটা প্রবল বায়ুপ্রবাহ হবে। সমুদ্রগামী নাবিকদের স্ত্রীরা প্রায়ই ঘরে কালো বিড়াল রাখতো, যাতে তাদের সমুদ্রে অবস্থানরত স্বামীদের সৌভাগ্য বজায় থাকে বা তারা সুরক্ষিত থাকে।
![]() |
Photo Credit: animalpw.blogspot.com |
বিঃদ্রঃ এসব একেবারেই কুসংস্কার। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
চলবে............
Very Good Initiative. Hope, you will continue your creative works.....
ReplyDeleteম্যাও....................
ReplyDeleteThe Pharaoh....
ReplyDelete