পর্ব-১১
![]() |
Photo Credit: artuk.org |
ময়ূর দক্ষিন এশিয়ার একটি সুন্দরতম পাখি। এই পাখীকে নিয়েও দেশে-বিদেশে নানা মিথ,
কুসংস্কার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এসব মানুষ আর আমলে না নিলেও
একসময় এগুলো খুব জনপ্রিয় ছিলো। এরকম কিছু কুসংস্কার নিয়ে আজকের পর্ব-
আমরা ছোটবেলায় ময়ূরের পেখম বইয়ের
ভাঁজে তেল দিয়ে রেখে দিতাম। আর ভাবতাম সেখান থেকে নতুন পেখম জন্মাবে!! মজার না??
যদিও কখনো সেই পেখম বাচ্চা দেয়নি। তবে আমরা তা করেই যেতাম। আর ময়ূরের নৃত্যে যে
বৃষ্টি আসে তাও ছোটবেলায় মুখে মুখে শুনে এসেছি।
এ তো গেলো আমাদের দেশের কথা। এখন
একটু বাইরে যাওয়া যাক।
ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি। ভারতে এই
পাখিটির পর্যাপ্ততা ও ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে একে জাতীয় পাখি করা হয়েছে। এই
পাখিটিকে লাবণ্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক মনে করা হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো- কিছুদিন
আগে ভারতীয় একজন বিচারক মহেশ শর্মা বলেন যে, ময়ূরকে ভারতের জাতীয় পাখী করার কারণ হলো
“ময়ূর ধর্মপরায়ণ পাখি” এবং “আজীবন কৌমার্য পালন করে”। শ্রীকৃষ্ণের মাথার
সিকি পাখা হিসেবে ময়ূরের পাখনার ব্যবহারকে তিনি ময়ূরের চিরকুমারত্বের প্রমাণ
হিসেবে পেশ করেছেন। হায়রে কুসংস্কার!!!!
“ময়ূর অশ্রুপান করে গর্ভধারণ করে”
এমন একটা কুসংস্কারও ভারতের বিভিন্ন যায়গায় প্রচলিত আছে।
ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচলিত একটি
কুসংস্কার হলো-ময়ূর তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে হারালে সে মারা যায় বা সারাজীবন একাকী
থাকে। কোন এক দেবীর অভিশাপের কারণে নাকি ময়ূরের এই অবস্থা!!
ভারতীয় পুরাণ অনুসারে, দেবতা ইন্দ্র
মাঝে মাঝে প্রাণিতে রূপান্তরিত হতেন, আর সেই প্রাণিটি ছিলো ময়ূর। ভারতে এও বিশ্বাস
করা হয় যে, ময়ূরের পালকের স্পটগুলো আসলে পুঞ্জাক্ষি, যা হাজার হাজার চোখের সমন্বয়ে
গঠিত।
ভারতীয় উপমহাদেশে বাড়ির বাইরে বের হবার
সময় ময়ূরের তীব্র ডাক শোনা অশুভ লক্ষণ মনে করা হয়।
আরো একটি প্রচলিত কুসংস্কার হলো-ময়ূর
নাকি স্বর্নকে ঘৃণা করে এমনকি তারা স্বর্নের কাছে পর্যন্ত যায়না।
ভারতের অনেকাংশে প্রচলিত যে, ময়ূর নৃত্য
করলে নাকি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে এবং অস্বাভাবিকভাবে ময়ূর কান্না করার অর্থ হলো
বাড়ির কারো মৃত্যু সন্নিকটে।
![]() |
Photo Credit: pinterest.com |
তিব্বতের বৌদ্ধরা ময়ুরের ছয়টি পেখম দিয়ে তৈরি হাতপাখা পানি শুদ্ধতার জন্য ব্যবহার করে থাকে। তারা এই বিশেষ হাতপাখাকে মন্ত্রসহ পানির উপর দিয়ে নাড়াতে থাকে। তাদের ধারণা এতে পানি বিশুদ্ধতা লাভ করে। ময়ুরের পেখম শক্তি ও বিশুদ্ধতার ক্ষমতা বহন করে।
চীনে প্রচলিত আছে যে, ময়ূর
শৌর্যবির্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। এদের পুনর্জীবন লাভ করার ক্ষমতা রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের অধিবাসীরা
মনে করে যে, ময়ূর পৃথিবীতে শয়তানের রূপ।
ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায় ময়ূরকে
তাদের দেবতা জ্ঞান করে তাকে “ময়ূর দেবতা” বলে ডাকে।
গ্রীক মিথলোজি অনুসারে, ময়ূর রাজা
জিউসের স্ত্রী হেরার বাহন।
![]() |
Photo Credit:pinterest.com |
ইউরোপীয়রা ময়ূরকে “শয়তান পাখি” হিসাবে
বিবেচনা করে থাকে। তাদের ধারণা ময়ূরের পেখমের “ডার্ক স্পট” গুলো আসলে “ডেভিল আই”
বা “শয়তানের চোখ”।
বিঃ দ্রঃ এসব নিছকই কুসংস্কার। এর
সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই।
চলবে.........
No comments:
Post a Comment